মেয়েরা রাত দখল করো

Posted by

·

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে, তনু, মুনিয়া, নুসরাতসহ পূর্বের প্রতিটি ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে এবং কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের সংহতিতে —

‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচির অবস্থানপত্র

ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ আমরা ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিজম থেকে মুক্তি পেয়ে এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি। জুলাই হত্যাকান্ডের মত ন্যাক্কারজনক হামলায় একমাসেরও বেশী সময় ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের পেটোয়াবাহিনীর হাতে যে শত শত ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন, গনগ্রেফতারের শিকার হয়েছেন, সেইসকল সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা সকল ছাত্র-জনতার গণহত্যা মামলা ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ লৈঙ্গিক প্রশ্নে কি কি ভুমিকা রাখতে পারে, আমাদের সমাবেশ আজ সেই লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা গত ১৬ বছর ধরে দেখে এসেছি কি অসংবেদনশীল বিচার ব্যবস্থা এখানে বিদ্যমান থেকেছে। লাখ লাখ নারী নির্যাতনের মামলা বছরের পর বছর ট্রাইবুনালে আটকে থেকেছে। নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে পর্যাপ্তে বিচারক থাকতো না মামলাগুলোর বিচারের জন্য। সহিংসতার ভিকটিমকে হার মানতে হতো আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা, ক্ষমতার দৌরাত্ম্য ও পিতৃতান্ত্রিক বিচার ব্যবস্থার কাছে, যেখানে একজন সহিংসতার শিকার নারীকে প্রমাণ দিতে হয় যে সে নিজে সহিংসতার শিকার হয়েছে। আমরা যদি তনুর কথা আজ স্মরণ করি, তবে দেখবো তনুর ধর্ষণ ও হত্যাকারীরা কিভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে পার পেয়ে গেছে। তার পোস্টমর্টেম নিয়ে কি ন্যাক্কারজনক নাটকীয়তা হয়েছে। যদি মুনিয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করি, অভিযুক্ত নির্যাতক বসুন্ধরা এমডি আনভীরকে কোন প্রকার তদন্তের মুখোমুখি না করেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মামলা থেকে। আমাদের আদিবাসী বোনরা সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের একাধিক ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনায় কোন বিচার ও সুরাহা পায়নি। এই ক্ষমতার দৌরাত্ম্য এর মূলকেন্দ্র ছিলো ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন ব্যবস্থা। আমাদের সংগ্রামী ছাত্র জনতা রক্ত দিয়ে সেই শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। আজ আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আর কোন উপাদান থাকবে না। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। তাই আজ এই সমাবেশ থেকে লৈঙ্গিক প্রশ্নে আমরা ১৫ দফা দাবি জানাতে চাই যাতে আগামী গণতন্ত্রের বাংলাদেশে লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে আর কোন বৈষম্য না থাকে।

১। তনু মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।

২। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে।

৩। ধর্ম, গোত্র, বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে।

৪। ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে হবে।

৬। ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন বিরোধী কমিটি এবং সেল তৈরি এবং কার্যকর করতে হবে।

৭। নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্বের জন্য যৌক্তিক অনুপাতে কোটা বরাদ্দ দিতে হবে।

৮। ১৮৬০ সালে গর্ভপাতের আইন বাতিল করতে হবে। নারীকে গর্ভপাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

৯। নারী এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

১০। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে।

১১। সকল প্রকার লৈঙ্গিক বৈষম্যকারী আইন বাতিল করতে হবে।

১২। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে।

১৩। আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে নারীর ৩৩% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

#ReclaimTheNight #justiceforRGKar #JusticeForMoumita #JusticeForMunia #JusticeForTonu

Photo: Shariar Istik Raj