অরুণিমা তাহসিন
২০২১ সালের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হলগুলোতে বহাল থাকা বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা নারী শিক্ষার্থীদের হলে সিট না দেয়ার/সিট বাতিলের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক নিয়মের স্থগিতাদেশ আসে নারী হলের প্রতিনিধিদের দাবির মুখে। ‘ঘটনার সূত্রপাত শামসুন নাহার হলে একজন ছাত্রীর আসন বা সিট বরাদ্দের আবেদন নিয়ে। আবেদনটি বিবেচনার সময় আবাসিক শিক্ষকেরা জানতে পারেন, তার এক নিকটাত্মীয় এই হলের ছাত্রী। ওই ছাত্রী বিবাহিত। তখন বিবাহিত এই ছাত্রীর সিট বাতিলের প্রসঙ্গ ওঠে।’ হলের প্রভোস্টরা প্রথমে তাদের স্বভাবগত আচরণই করে- আমাদের হলের প্রভোস্ট বলেন ভিসি থেকে নিয়ম চেইঞ্জ করে আনতে। যেই বলা সেই কাজ -এই তেজে তখন আমরা মেয়েদের হলের কয়েকজন প্রতিনিধি গিয়ে এই নিয়ম বাতিল করায়ে ছাড়ি। নিয়মটা বাতিলের বাইরেও তখন বাকি তিন দাবি ছিলো:
১. শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় হলের নথিতে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা।
২. হল প্রশাসনের যেকোনো ধরনের হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া।
৩. অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া।
এই তিনটি দাবির মূল জায়গা ছিলো বৈষম্যের বিরোধীতা: নারী হিসেবে বৈষম্য থেকে শুরু করে ছাত্রদের ক্যাম্পাস এক্সেসে বৈষম্য ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বৈষম্য জারি করে যারা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান। এই তিনটার কোনটার প্রতিই তারা স্বভাবসুলভভাবে কর্ণপাত না করে কাটিয়ে দেয় একটা প্যারাসিটেমল ধরায়ে দিয়ে গা বাঁচায়ে। তখন আমরা ঠিক করি যে, আমাদের অন্তত এই আওয়াজটা জারি রেখেই যাওয়া প্রয়োজন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আবাসিক স্ফিয়ারে এত এত বৈষম্য। এর অবসান দরকার। তখন আমরা একটি প্রেস কনফারেন্স করে জানাই যে-
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে আমরা অভিন্ন নিয়ম চাই।
একটু নিউজপেপার থেকে স্মরণে এনেই বলছি:
“বিশ্ববিদ্যালয় একেক হলে কেন একেক নিয়ম থাকবে- এ প্রশ্ন তুলে তাসনিম বলেন, ‘আমরা প্রতিটি আবাসিক হলে একই নিয়ম চাই। লিঙ্গভেদে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক নিয়ম করা যাবে না। এর জন্য ছাত্র ও ছাত্রীদের মোট ১৮টি হলের নিয়মাবলি জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে সংশোধন করে সব হলের জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব ও যুগোপযোগী অভিন্ন নিয়ম প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি, আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে।”
^স্পষ্টতই মেনে নেয়া হয় নাই। প্যারাসিটামল তো দিয়েই দিয়েছিলো।
আমার একই সময়ের এই ঘটনাও মনে পরলো- https://www.bbc.com/bengali/news-59662415
আমরা তখন একদম সময়ের উপরে দাঁড়িয়েই অনুভব করি যে কোন জায়গা আসলে আমাদের জন্য কবে নিরাপদ ছিলো? বিবাহিত মেয়েদেরকে যেই আশ্রয়ের ‘ভরসায়’ সিট কাটার মতো অবিবেচক কাজ করে আসা হয়েছে কয়েক বছর এমন বৈষম্যের ক্ষত আসলে কতদূর সম্ভাব্য!
এরপর আড়াই বছর কেটে গেলো। আমরা দাঁড়িয়ে আছি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটা জটিল আর কঠিন সময়ে যেখানে সব প্রতিষ্ঠান সংস্কারে কথা, বিতর্ক সব চলছে যার স্পার্ক এসেছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চাই তা নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। কথা চলবে। আমি শুধু আজ এটুকু স্মরণ করাতে চাই যে -আমরা এমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেখতে চেয়েছিলাম সবসময় যেখানে নিয়মকানুন থেকে প্র্যাকটিসে বৈষম্য থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটে আমাদের এই লড়াই এবার আলো দেখুক।
আমরা যারা ছিলাম: Sk Tasnim Afroz Emi, Monira Sharmin, Umama Fatema, Afsana Safa, ফাতিমা আক্তার, অন্তরা শারমিন, সানজিদা আফরীন, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, Ripa Kundu।
